উন্নয়ন বাজেটের ৪০% কৃষিখাতে বরাদ্দের দাবিতে গাইবান্ধায় বিড়্গোভ মিছিল ও সমাবেশ
- আপডেট সময় : ১১:০৮:২২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ জুন ২০২৪ ৫২ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক:– উন্নয়ন বাজেটের ৪০% কৃষিখাতে বরাদ্দসহ বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে সারাবছর শ্রমজীবি-নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য আর্মিরেটে রেশন সরবরাহের দাবিতে সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষকফ্রন্ট গাইবান্ধা জেলা শাখার উদ্যোগে বৃহসপতিবার শহরে বিড়্গোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিড়্গোভ মিছিলটি দলীয় কার্যালয় থেকে বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদড়্গিণ করে।
মিছিল পূর্ব দলীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
কৃষকনেতা জাহিদুল হকের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সমপাদক মনজুর আলম মিঠু, কৃষক ফ্রন্টের জেলা সংগঠক চপল সরকার, ওয়ারেছ মন্ডল রাংগা, কৃৃষ্ণ চন্দ্র পাল, সবুজ মিয়া প্রমুখ। বক্তারা চলমান বাজেট অধিবেশনে জাতীয় বাজেটের উন্নয়ন বরাদ্দের ৪০% কৃষিখাতে বরাদ্দের দাবি জানান।
তারা বলেন, বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ, দেশের মোট শ্রমশক্তির অর্ধেক কৃষি খাতে নিয়োজিত, অথচ সম্ভাবনাময় এই খাতটি সবচেয়ে অবহেলিত। সার, বীজ,কীটনাশক, সেচ, বিদ্যুৎসহ সকল কৃষি উপকরণের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সার,বীজ, কীটনাশকে ভেজাল দিয়ে মুনাফা লুটছে। কৃষক লাভজনক দাম তো দূরের কথা, ফসলের উৎপাদন খরচও তুলতে পারছে না।
ফলে ক্ষুদ্র কৃষক জমি হারিয়ে ভূমিহীন এবং মাঝারি কৃষক গরীব কৃষকে পরিণত হচ্ছে। খরা, বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল নষ্ট হয়ে কৃষক ক্ষতিগ্রসত্ম হচ্ছে। করোনাকালেও কৃষক ঝুঁকি নিয়ে উৎপাদন অব্যাহত রেখে ১৮ কোটি মানুষের মুখে অন্ন যুগিয়েছে।
সরকার যে কৃষি প্রণোদনার কথা বলছে তা ধনী কৃষক বা উৎপাদনের সাথে যারা যুক্ত নয় তারাই পাচ্ছে, দলীয়করণ- দুর্নীতির ফলে প্রকৃত কৃষক কিছুই পাচ্ছে না। কৃষি প্রধান বাংলাদেশে কৃষির সঙ্গে যুক্ত মানুষগুলোই সবচেয়ে বিপর্যসত্ম।
এ অবস্থা থেকে কৃষি এবং কৃষকদের রক্ষা করতে হলে অবিলম্বে বিএডিসি সচল করে সরকারি উদ্যোগে সার-বীজ-কীটনাশকসহ সেচ সুবিধা অল্প খরচে কৃষকদের দিতে হবে। পর্যাপ্ত খাদ্য গুদাম ও সবজি সংরক্ষণের জন্য হিমাগার নির্মান করে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে লাভজনক মুল্যে ফসল ক্রয় করতে হবে। ক্ষেতমজুরদের এমনিতেই বছরে ৯ মাস কাজ থাকে না, ফলে সারা বছরের কাজ ও খাদ্যের নিশ্চয়তা নেই। উপরন’ কৃষিতে ক্রমাগত যান্ত্রিকীকরণের ফলে তাদের কাজ আরও সীমিত হচ্ছে, যা বিকল্প কর্মসংস’ান না থাকায় সেই সংকট আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।
কাজের প্রয়োজনে নিজ এলাকার বাইরে গেলে সেখানে নিরাপদ যাতায়াতসহ স্বাস’্যসম্মত খাদ্য ও আবাসনের কোন আয়োজন থাকেনা। সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ নিয়েও চলে ব্যাপক দুর্নীতি-অনিয়ম। তহশিল অফিস, ভূমি অফিস, সাব রেজিস্ট্রি অফিস, সেটেলমেন্ট অফিস, পুলিশ থানা ও ব্যাংকে ঘুষ-দুর্নীতি-হয়রানির শিকার হচ্ছে কৃষক।
দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে মেরে দিচ্ছে পাচার করছে, সেই ঋণখেলাপী ব্যাংক ডাকাতদের বিরম্নদ্ধে কোন কার্যকর ব্যবসা নেওয়া হচ্ছে না বরং সমাদর করা হচ্ছে। অথচ ১০/২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ফসলের দাম না পাওয়া ও বন্যা-খরাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল নষ্ট হওয়ায় পরিশোধ করতে না পারলে কৃষকের নামে সার্টিফিকেট মামলা দিয়ে হয়রানি ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিক কোমপানির বন্ধ্যা বীজ কৃষিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রানেত্ম নিয়ে গেছে। কৃষক কৃষি উপকরণ কিনতেও ঠকে, ফসল উৎপাদন করে বেচতেও ঠকে।
ভয়ংকর এই পরিসি’তি থেকে কৃষি-কৃষক-ক্ষেতমজুরদের রক্ষার কোন পরিকল্পনা সরকারের থাকেনা। তাই আসন্ন জাতীয় বাজেটে কৃষি খাতে উন্নয়ন বরাদ্দের ৪০ ভাগ বরাদ্দ দিয়ে কৃষি-কৃষক-ক্ষেতমজুরদের রক্ষায় কার্যকর ব্যবসা নিশ্চিত করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন প্রতিবছর শ্রমশক্তি যতই বাড়ছে সেই তুলনায় কর্মসংস’ান বাড়ছে না। কিন’ রাষ্ট্রীয় শিল্প-কলকারখানা বন্ধ করা হচ্ছে ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চলছে ছাঁটাই।
চাল-ডাল-আটা-ভোজ্যতেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি জিনিসের দাম এখন সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। কিন’ দেশে শ্রমিক, কৃষক, চাকরিজীবী, ছোট দোকানদারসহ সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি। জ্বালানি তেল ও সকল পরিবহনের ভাড়া বেড়েছে। শিক্ষা-চিকিৎসার খরচ, বাড়িভাড়া ক্রমাগত বাড়ছে।
তাই আসন্ন জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে শ্রমজীবী ও নিম্নআয়ের মানুষের জন্য সারাদেশে আর্মিরেটে রেশনে নিত্যপণ্য সরবরাহ করাসহ বয়স্ক-বিধবা-প্রতিবন্ধীদের মাসিক ১০ হাজার টাকা ভাতা প্রদান করার জোর দাবি জানান। মিছিল শেষে নেতৃবৃন্দ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অর্থমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।